স্বাধীনতার কিছু স্মৃতি ৯

স্বাধীনতার কিছু স্মৃতি ৯

ট্রেনিং চলাকালীন কিছু এপিসোড 
আমাদের ট্রেনিং চলা কালে ঘটে যাওয়া কয়েকটি এপিসোড এখানে না বললেই নয়। যদিও আমাদের মিলিটারি ট্রেনিং খুব কম সময়ের জন্য হয়েছিল, এরই মধ্যে কয়েকটি মূল্যবান ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো নিম্নরূপ।

(a) রাইফেল ট্রেনিং
 আমাদের আত্মরক্ষার জন্য রাইফেল ব্যবহারের ট্রেনিং নিতে হয়েছিল। ক্যাম্পের নিকটেই পাহাড়ের নীচের অংশে সেই ট্রেনিং সেন্টার (shooting range)। সম্ভবত AK-47 দিয়ে আমাদের ট্রেনিং। আমরা লাইন হয়ে দাঁড়িয়ে। মনে হয় স্ট্যান্ড থেকে ৩০০ মিটার দূরে টার্গেট পোল যেখানে উদ্দেশ্য করে গুলি ছুড়তে হবে। একটা কাঠের খুঁটির সাথে গোলাকার একটা টার্গেট প্যাড। প্রতি জন ১০টা করে গুলি করবে এবং কমপক্ষে ৮ টা গুলি টার্গেটের ভিতরে লাগতে হবে। কম হলে আবারো একই কাজ পুনরায় করা লাগবে। শুরু হল প্রাকটিস। গুলি করার সময় প্রথমে চেক করে নিতে হবে ট্রিগার গার্ড, ম্যাগাজিন, চ্যাম্বার ইত্যাদি। সেইসাথে optic mount (aimpoint), front iron sight post গুলো চেক করে নিতে হবে। রাইফেলের বাটটি ডান কাঁধের সাথে খুব শক্ত করে ধরে শুট করতে হবে। আসলে, গুলি করার সময় বাটটি পিছনের দিকে প্রচণ্ড আকারে ধাক্কা দেয়। অনেক সময় সে ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে পিছনের দিকে পড়ে যাওয়া লোকও কম নয়। ঠিক সেই ঘটনাটিই ঘটলো। তবে সেবারে খুব বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম।      

(b) হ্যান্ড গ্রেনেড ট্রেনিং (Hand grenade)  
একই ভাবে হ্যান্ড গ্রেনেডের ট্রেনিং শুরু হল। গ্রেনেডের উপরের দিকে একটা সেফটি পিন থাকে। পিনটি খুলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জোরে ছুঁড়ে মারতে হবে। দেরী হলে সেখানেই বিস্ফোরণ করবে। সেটা হবে আত্মঘাতী ঘটনা। ঠিক সেই ঘটনাটিই ঘটল। কিন্তু সামান্যের জন্য সেদিন আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম। একজন মুক্তিযোদ্ধা পিনটা খুলে গ্রেনেডটা ওভাবেই হাতে ধরে রেখেছিল। নিমেষেই আমাদের একজন শিক্ষক বিষয়টা টের পেয়ে গ্রেনেডটা তার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে মারল। আর এক সেকেন্ড দেরী হলে গ্রেনেডটি তার হাতেই বিস্ফোরণ করত, এবং সে তো বটেই, আমরাও কয়েকজন পঙ্গু হয়ে যেতাম, অথবা এজগত থেকে বিদায় নিতে হতো। 

© ক্লাসরুমের একটি ঘটনা
  জেনরেল অরোরার নাম কেই বা না জানে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে তার নাম জড়িত। তাঁর পুরা নাম Jagjit Singh Aurora, তিনি ছিলেন Lieutenant General GOC-in C East Command, India. তিনি ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান Lieutenant General Amir Abdullah Khan Niazi কে Unconditional Instrument of Surrender বিনাশর্তে আত্মসমর্পণে সই করতে বাধ্য করেন। ৯০,০০০ পাকিস্তানি সেনা ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাদের সেদিনকার সাইনিং ছেরেমনির স্ট্যাচু মুজিব নগরে রক্ষিত আছে। 
General Aurora একদিন আমাদের ক্লাস নিতে এসেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের সাথেও কয়েকবার যুদ্ধ করেছেন। ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাক যুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। আমরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনারা ৬৫ এর যুদ্ধে পাকিস্তানের সাথে হেরে গিয়েছিলেন। আপনারা কিভাবে ভাবেন যে এবারে আপনারা জিতবেন?  তাঁর উত্তর ছিল, এখন ৬৫ নয়, ইতিমধ্যে অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত এবারে তোমরা আমাদের সাথে আছো। সেদিন তাঁর ভিতরে খুব আত্মবিশ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। তার কয়েক মাস পরেই তিনি সেটা প্রমান করেছিলেন। শুনেছি তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর একবার হেলিকপ্টারে যশরের আকাশ ভ্রমন করেছিলেন। 

(c) P E সংক্রান্ত
যদিও আমাদের ক্লাসরুম শিক্ষাটাই মুক্ষ ছিল, কিন্তু স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য নিয়মিত শরীর চর্চাও করা লাগতো। সকাল বেলায় রীতিমত পিটি প্যারেড, যেমন দৌড়, বুকডন, ক্রলিং করতাম। বিশেষ করে বুকডন এবং ক্রলিং ছিল আমাদের জন্য কঠিন। আমরা তো একদিন রীতিমত ইন্সট্রাকটরের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক করে বসলাম। শেষমেশ ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়েছিল। বাঙালিরা স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।
স্বাধীনতার কিছু স্মৃতি ৯ our karamdi
স্বাধীনতার কিছু স্মৃতি ৯ our karamdi village 


৪ঠা মে, ২০২০  

আজ এখানেই শেষ
Coppy from FB ID

No comments

Powered by Blogger.