About of Gangni.....Demo post



গাংনী আমার অহংকার,গাংনী আমার প্রাণের শহর
গাংনী বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার অন্তর্গত
একটি উপজেলা। ১৯৮৪ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি
একে উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অবস্থান ও পরিচিতি
গাংনী নামের সাথে যুক্ত হয়ে আছে এ
অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশের পরিচয়। গাংনী
পদটিই এখানে প্রধান। নদী বা নদীর মৃতপ্রায়
ধারাকে এ এলাকার মানুষ গাং বা গাঙ বলে। অনুমান করা
হয় যে, গাঙ্গেয় অববাহিকার এ এলাকায় প্রথম বসতি
স্থাপনকারী মানুষেরা অন্যদের বসবাসে উদ্বুদ্ধ
করার জন্য ‘এ এলাকায় গাং অর্থাৎ নদী নেই’- এমন
ঘোষণা দেয়। ‘গাং নেই’ পরবর্তীকালে হয়ে যায়-
‘গাংনী’। এ এলাকার মানুষেরা নেই বুঝাতে ‘নি’ উচ্চারণ
করে। গাংনী নামকরণে ভিন্ন আর একটি যুক্তিও
পাওয়া যায়। পশ্চিমে কাজলা নদী এবং পূর্বে মাথাভাঙ্গা
নদীর মধ্যবর্তী দোয়ার অঞ্চলে এ থানার
অবস্থান। সেই অর্থে এ নদীর প্রধান উৎস গঙ্গা।
গঙ্গার কন্যা মনে করার কারণে খরস্রোতা
মাথাভাঙ্গাকে একসময় এ এলাকার মানুষ ‘গাংগীনি’ বলে
ডাকত। গাংগীনি থেকে গাঙ্গনী বা গাংনী শব্দের
উৎপত্তি। গাংনী নামকরণে মুলত এ অঞ্চলের নদী
সম্পৃক্ততার পরিচয় ফুটে উঠেছে
প্রশাসনিক এলাকা
উপজেলার মোট আয়তন ৩৪৪.৪৭ বর্গ
কিলোমিটার। এটি ১টি থানা, ১টি পৌরসভা (গ শ্রেণীর),
৯টি ওয়ার্ড, ১৩টি মহল্লা, ০৯টি ইউনিয়ন, ১০৩টি মৌজা,
১২০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত।
জনসংখ্যার উপাত্ত
মোট জনসংখ্যা ২,৬৯০৮৫ জন (২০০১ সনের
আদমশুমারী অনুযায়ী), পুরুষ ১,৩৭,৯২১ জন, মহিলা
১,৩১,১৬৪ জন, মোট খানার সংখ্যা ৬৪,৩৬৫ টি, বার্ষিক
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৬২%।
শিক্ষা
শিক্ষার হার ৩৬.৫০% (পুরুষ ৩৮.৭০.%, মহিলা ৩৪.১০%)।
মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮২টি (সরকারি ৭৮টি,
বেসরকারি রেজিষ্টার্ড ৬৮টি, আন রেজিষ্টার্ড ৮টি,
কিন্ডার গার্ডেন ১৪টি, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা
০১টি, উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন নেই, কমিউনিটি ৪টি), নিম্ন
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১১ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০ টি, উচ্চ
মাধ্যমিক ০৩ টি, স্কুল এন্ড কলেজ ০১ টি, ডিগ্রী
কলেজ ০৩ টি (বেসরকারি), কলেজ ০৯ টি, ফাযিল
মাদ্রাসা ০১ টি, আলিম মাদ্রাসা ০১ টি, দাখিল মাদ্রাসা ০৭টি।
গাংনী উপজেলার ঐতিহ্য
গাংনী উপজেলার অন্যতম উলেস্নখযোগ্য
নীলকুঠি গাংনী থানার সাহারবাটি ইউনিয়নের ভাটপাড়ায়
অবস্থিত। ১৮৫৯ সালে স্থাপিত ধ্বংস প্রায় এই
নীলকুঠিটি ইট, চুন-শুরকি দ্বারা নির্মাণ করা হয়। এর ছাদ
লোহার বীম ও ইটের টালি দিয়ে তৈরী। এই কুঠির
পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কাজলা নদী। গাংনী
উপজেলার উত্তর প্রান্ত ঘেঁষে ঐতিহাসিক কাজলা
নদীর তীরে অবস্থিত জাতীয় জীবনের ও
সভ্যতার স্মারক ভাটপাড়া নীলকুঠি। যা আজও ব্রিটিশ
বেনিয়াদের নির্যাতনের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে
আছে। অযত্ন অবহেলায় এবং সংস্কারের অভাবে
কুঠিবাড়িটি ধ্বংসের পথে। ভাটপাড়া নীলকুঠিটি কাজলা
নদীর তীরে ২৩ একর জমির ওপর অবস্থিত।
সাহেবদের প্রমোদ ঘর ও শয়ন রুম সংবলিত দ্বিতল
ভবনটি জীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। কাঁচারি ঘর,
জেলখানা, মৃত্যুকুপ ও ঘোড়ার ঘর বিলুপ্ত প্রায়। দামি
মার্বেল পাথর আর গুপ্তধনের আশায় একসময়
ভেঙে ফেলা হয়। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব
বর্তমানে সরকারের রাজস্ব বিভাগের ওপর ন্যাস্ত।
এরই মধ্যে ভবনের ইট ও পাথর চুরি হয়ে গেছে।
দামি ও ফলদ বৃক্ষ হয়েছে নিধন। বাকি অংশে গড়ে
উঠেছে আবাসন প্রকল্প। ধীরে ধীরে
বেদখল হয়ে যাচ্ছে জায়গাজমি। গোটা কুঠি এলাকা
বর্তমানে গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
কুঠিভবন ও নীলগাছ আজও স্মরণ করিয়ে দেয়
নীলকরদের অত্যাচার ও নির্যাতনের কথা। প্রচলিত
আছে গভীর রাতে এখানে এসে দাঁড়ালে শোনা
যায় নর্তকীদের নূপুরের আওয়াজ ও চাষিদের
বুকফাটা আর্তনাদ। কালের সাক্ষী ভাটপাড়া কুঠিবাড়িতে
এখনও অনেক পর্যটক এলেও ধ্বংসাবশেষ
দেখে হতাশ হয়েই ফিরতে হয়। এলাকাবাসীর দাবি
পরাধীনতার শিকলে বন্দি থাকাকালীন শোষক এবং
শাসকদের নির্যাতনের নির্মম স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক
ভাটপাড়া নীলকুঠি সংরক্ষণে হতে পারে এক
অনিন্দ্য সুন্দর দর্শনীয় স্থান। গড়ে তোলা
যেতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র।

No comments

Powered by Blogger.