Mokhlesur Rahman -2

১৯৭১সালের মকলেচুর রহমানের সৃতি এবং অভিজ্ঞতা স্বাধীনতার

স্বাধীনতার কিছু সৃতি ২


কেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলাম?
পিছনের কিছু ঘটনা না বললেই নয়। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ,  স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু, এবং সেটি আবার হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে। সম্ভবত ২৮ বা ২৯শে মার্চ। তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার এসডিও জনাব তৌফিক এলাহি (পরবর্তীতে বীর বিক্রম এবং শেখ হাসিনা কেবিনেটের জ্বালানি উপদেষ্টা) অত্তান্ত ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তান সরকারকে উপেক্ষা করে এলেন  তেতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ম্থুরাপুর গ্রামে। গ্রামটি দুভাগে বিভক্ত, অর্ধেকটা ইন্ডিয়ার মধ্যে। একই গ্রাম অথচ দুটি দেশ, ভাবতেই যেন কেমন লাগে। এতে স্থানীয় জনগনের খুব বেশি অসুবিধা হত বলে মনে হয়নী। গ্রামের এপার ওপারের লোকজন সবাই আত্মীয়। হাটবাজার থেকে শুরু করে বিয়েসাদি  সবকিছুই  স্বাভাবিক। এমন কিছু লোক ছিল যাদের রান্নাঘর দুভাগে ভাগ হয়ে গেছে শুধুমাত্র ব্রিটিশদের কারনে। আমার কয়েকজন ফ্রেন্ড ছিল যারা ভারত থেকে এসে আমাদের স্কুলে (Karamdi Junior High School)পড়াশুনা করতো। সে যে অন্য দেশের বাসিন্দা আমরা কখনই সেটা মনে করিনাই।

যাক, তৌফিক এলাহি সাহেব কেন এই অজ পাড়াগাঁয়ে আসলেন, কি-ই বা উদ্দেশ্য। সেদিনটা ছিল একটা ইতিহাস। আমরা দেখলাম ভরতের পক্ষ থেকে বিএসএফ এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এলেন কিছু সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে।  আর তৌফিক সাহেবের পক্ষে আসলেন  তেতুলবাড়ীয়া বর্ডার ক্যাম্পের পুলিশ।  শুরু হল ইতিহাস তৈরি। উভয়ে নিজ নিজ দেশের  পতাকা বিনিময় করলেন। বাংলাদেশের পতাকায় তখনও লালসবুজের মাঝখানে মানচিত্র ছিল। স্থানীয় ব্যাক্তিদের মধ্যে ছিলেন তেতুলবাড়িয়ার নুরুল হুদা বিশ্বাস (প্রয়াত, ইয়াঙ্গু এবং কর্মঠ চেয়ারম্যান  ) , মথুরাপুর গ্রামের আখছার আলি শেখ, (প্রয়াত, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার) , আর আমদের মত কিছু চুনোপুঁটি। বলে রাখি আমি তখন এস এস সির দ্বিতীয় বারের পরীক্ষার্থী। এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর (Meherpur College) প্রথম ব্যাচ।

ভারত সম্পর্কে কিছুই জানিনা অথচ কত কাছের দেশ। কৌতূহল তো থাকতেই পারে। ভারতের বর্ডার আমাদের গ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার মত।  আর আমাদের গ্রামের বিরাট একটা জনগোষ্ঠী ভারত থেকে উঠে আসা, তেমনিভাবে আমাদের গ্রাম থেকে অনেক হিন্দু  সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতে চলে গিয়েছিল, ঠিক পালাবদলের মত। আমরা কয়েকবন্ধু মনে করলাম ইনডিয়াতে বেড়াতে যাব। ভরসা হল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রেজাউল হক ( সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান)।ভারত বিভক্ত হওয়ার পূর্বে ওদের বাড়ি ছিল পিপুলবাড়িয়া গ্রামে, সেটিও বর্ডার থেকে সম্ভবত ৫/৬ কিলো। আমরা কয়েকবন্ধু মিলে সাইকেলে রওয়ানা দিলাম ওই গ্রামের দিকে। সেখানে রেজাউলদের কিছু আত্মীয় সজন তখনও  বাস করত। ওই গ্রামের কিছু মাতবর শ্রেনির লোকজনের সাথে পরিচয় । তারা রেজাউলের বাবামা তো অবশ্যই, আমার বাবাকেও চেনে। মনে হচ্ছিল বাবাদেরই আমরা যেন প্রতিনিধিত্ব করছি। আমরা সম্ভবত ৮/৯ জন ছিলাম। ৩টা বাড়িতে ভাগ করে আমদের দুপুরের খাবারের ব্যাবস্থা। সে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। হিন্দু বাড়িতে প্রথম ভাত খাওয়া। ৩ তলা বাড়ি, নিচ তলাই খাবারের ব্যাবস্থা। নিয়ে এলো কাঠের পিঁড়ি, আর পদ্ম পাতা। এরপর খাবার পরিবেশন। প্রথমে শুরু হল কাঁঠালের ইঁচড়, সবজি, ডাল ইত্যাদি দিয়ে। মনে করলাম ডাল দিয়েই হয়তো শেষ। আমরা বাংলাদেশিরা সাধারনতঃ তাই মনে করি।  মেইন ডিশ তো শেষে আনা হল। কিন্তু  ইতিমধ্যে আমাদের পেট প্রায় ফুল। কি বোকামিই না করেছি। আমাদের বয়সের কিছু ছেলেদের সাথে আড্ডাটি ভালই জমেছিল। বিকাল বেলাই আমাদেরকে নিয়ে স্থানীয় লোকজনের বৈঠক। উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশকে কিভাবে সাহায্য করা যাই এনিয়ে। কিন্ত আমরা তা নিতে রাজি হলাম না। কারন তখনও পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের তেমন কিছু জানা নেই।

তারপরদিন বাড়ি ফিরলাম এবং বাবাকে বললাম আমাদের অভিজ্ঞতা। বাবা শুধু বলল হিন্দু বাড়িতে শেষপর্যন্ত ভাত খেয়ে এলে, এর বেশি কিছু নয়। তখনও আমার ধারনা ছিল না কেন হিন্দু বাড়িতে ভাত খাওয়া যাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একসাথে নয়, এক প্লেটে কত খেয়েছি।

 আজ এখানেই শেষ

coppy Form Mokhlesur Rahman fb id

No comments

Powered by Blogger.